১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে শিকাগো মহাসম্মেলনে স্বামীজির বক্তৃতা তথা সার্বজনীন বার্তা বর্তমান ভারতে যদি সকলের আদর্শের স্থান গ্ৰহণ করতে পারত এবং সকল মানুষ নির্দ্বিধায় খুশি মনে তা অনুসরণ করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সক্ষম হত তবে বোধহয় ২০২০ সালে মডার্ন যুগে ভারতের এমন দুর্দশা হত না। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তথা তার অনুপ্রেরণা শুধু বই-এর পাতাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে (কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম)। শুধু বাঙালি কেন সমগ্ৰ বিশ্ব যদি স্বামীজির বাণী নিষ্ঠার সাথে পালন করত তবে কোনো কৃত্রিম, বাহ্যিক ভেদাভেদ মানুষে-মানুষে সম্পর্কে চির ক্ষত সৃষ্টি করতে পারত না।
সাধারণ মানুষের অগোচরেই তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে ভারতের কয়েকটি উচ্চ স্থানাধিকারী কর্তাগণ। সর্বোৎকৃষ্ট লিডার হিসেবে চিরসম্মানিত স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যখন বলেন—'চরিত্র গঠনের জন্য রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য অপেক্ষা উৎকৃষ্ট সাহিত্য আমি কল্পনা করিতে পারিনা',তখন আর কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। দেশের প্রধান চালিকাশক্তি যখন এই পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ, তখন ভারতের খুব পবিত্র শান্তিপূর্ণ দশা আশা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
স্বামীজির কথায়—‘প্রকৃত ধার্মিক লোক সর্বত্রই উদার হয়ে থাকেন। তাঁর ভিতর যে প্রেম আছে, তাইতে তাঁকে বাধ্য হয়ে উদার হতে হয়। কেবল যাদের কাছে ধর্ম একটি ব্যবসা মাত্র তারাই ধর্মের ভিতর সংসারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা,বিবাদ ও স্বার্থপরতা এনে ব্যবসার খাতিরে ওরকম সংকীর্ণ ও অনিষ্টকারী হতে বাধ্য হয়।’বাস্তবিক উপরিউক্ত উদ্ধৃতিটির দ্বিতীয় অংশ আমাদের দেশে সম্পূর্ণ গতিতে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে চলেছে।
ঠিক ভুল বিচার করার বয়স মানুষের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তৈরী হয়ে যায়। সেই সঠিক নির্বাচনের এক আদর্শ প্রতীক হলেন স্বামীজি। তাঁকে অনুসরণ করলে মানুষ স্বভাবতই মানুষ নামটির সঠিক ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারে। তাঁর বক্তব্যকে যদি বেদবাক্যর ন্যায় পালন করা যায় তবে, সত্যিই করুণা হয়।বক্তব্যটি খানিকটা এইরূপ—‘... কেউ যদি এরকম স্বপ্ন দেখেন যে, অন্যান্য ধর্ম লোপ পাবে আর তাঁর ধর্মই শুধু টিকে থাকবে, তবে তিনি বাস্তবিকই কৃপার পাত্র; তাঁর জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত।’
‘আমেরিকার বোন ও ভাইয়েরা’(সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা)—এই সম্বোধন সকলের পরিচিত। আমেরিকার স্থানে ভারত বসিয়ে যদি কেউ তাঁর বক্তৃতার উপস্থাপনা করেন তবে ধরে নেওয়াই যায়, তিনি বিবেকানন্দ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।তৎসত্ত্বেও কীভাবে কোনো ব্যক্তি নিজেকে কূপমন্ডূক করে সংকীর্ণ রাখতে পারেন অত্যন্ত ভাবনার বিষয়।
স্বামীজির নিজস্ব অভিজ্ঞতা এই যে—‘আমাদের নিজেদের মাতৃভূমির পক্ষে–হিন্দুধর্ম ও ইসলামধর্ম–এই দুই মহান মতের সমন্বয়–বৈদান্তিক মস্তিষ্ক এবং ইসলামীয় দেহ–একমাত্র আশা। আমি মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি–এই বিবাদ-বিশৃঙ্খলা দূর করে ভবিষ্যৎ পূর্ণাঙ্গ ভারত বৈদান্তিক মস্তিষ্ক ও ইসলামীয় দেহ নিয়ে মহামহিমায় অপরাজেয় শক্তিতে জেগে উঠছে।’সেখানে যদি সেই বিবাদকেই সমগ্ৰ কার্যের মূলকেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হয় তবে ভারতের দুর্দশা তো অনিবার্য।
এসব সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষিত মানুষ যদি লালসা ত্যাগ করে সুস্থ মস্তিষ্কে আপন জ্ঞান অনুশীলন করেন এবং স্বামীজির সেই মাটিতে পোঁতা বীজের মতো মাটি,বাতাস,জল গ্ৰহণ করে নিজ বুদ্ধিকে বৃক্ষে পরিণত করতে পারেন,তবে ভারতের অবস্থা মানসিকতার দিক থেকে কিছুটা উত্তরণ ঘটবে,এমন আশা করা যেতে পারে।যে মানুষ চিরকাল একটি সারমর্ম দিয়ে গেলেন–সমন্বয়, শান্তি,পরমতগ্ৰহিষ্ণুতা এবং বিশ্বজনীনতা,ভারতের এমন দশা দেখলে তিনি সত্যিই কষ্ট পেতেন।
তাঁর সমস্ত বার্তা পালন করে ভারতবাসী যদি নিজ দেশপ্রেমে দেশের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেন তবে খুব শীঘ্রই সমস্ত বিভেদ সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে সকল পতাকায় একটি কথাই লিখিত হবে—‘বিবাদ নয়,সহায়তা;বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্ৰহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।’
সোহিনী শবনম |
সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )
Very nice
ReplyDeleteSundor 🖤
ReplyDeleteWonderful.
ReplyDelete