Saturday, 20 June 2020

উমা দে / পশ্চিম বর্ধমান




শুধু ভারতবর্ষে নয় সারা বিশ্বে স্বামী বিবেকানন্দ এক মহান ব্যক্তিত্ব,এক আদর্শ পুরুষ।সব দেশ একবাক্যে গ্রহণ করেছে সামগ্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য তার বহু গ্রন্থে লেখা মতামত। পরাধীন ভারতবর্ষের পরিকাঠামোয় তার বহু প্রচারিত মতাদর্শ গ্রহণ করেন বহু বড় বড় নেতৃবর্গ। রাজনৈতিক বিবেচনায় তার বক্তব্য,"সমগ্র মানবজাতি একত্রে সহাবস্থান চাই,যে ধর্ম নিরন্নকে এক টুকরো রুটি দিতে পারে না,সে ধর্মকে তিনি মানেন না। তিনি বঞ্চনাহীন নতুন স্বাধীন ভারত গঠনের কথা বলেন।"'স্বদেশ মন্ত্র' গ্রন্থ।

 তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মের মূল সূত্র এখানেই।
শিকাগো ধর্ম সভায় ভারতের ধর্মীয় মতবাদ, দর্শন, ভাবাদর্শে বিশ্ব বিস্মিত হয়ে তাঁকে আদর্শ রূপে গ্রহণ করে।

  আজ ও বাঙালি বিপন্ন নানাভাবে, বাঙালির একটা বৃহৎ অংশ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তৎপর।আজ‌ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মির্জাফরের অভাব নেই,আজ‌ও ধর্ম বিদ্বেষ মাথা চাড়া দেয় মাঝে মাঝে,যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির‌ আগুন।

তখন মনে হয় স্বামীজির এত ভালোবাসার ভারতাত্মা কি হারিয়ে গেল।
তবে সকলেই যে তাকে ভুলে গেছে তার কিন্তু নয়,আজো খণ্ডিত ভারতবর্ষের ভ্রাতৃশত্রু পাকিস্তানের সর্বক্ষণের আক্রমণ বীর সেনানী ঠেকায় রক্তের বিনিময়ে শহীদ হয়ে। প্রতিরক্ষা করতে এগোয়, যদিও স্বামীজি এরূপ স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেন নি। চেয়েছিলেন"একত্র সহাবস্থান'। কিন্তু প্রেরণা তিনি।
বিশেষ করে করোনা ভাইরাস, বিগত চার মাস ধরে জীবন যাত্রাকে করেছে ব্যাহত,লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি,সরকারী চাকুরীজীবী তবু অন্ন সংস্থান করে। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো দু মুঠো অন্নের জন্য অন্ধকার দেখে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে আমফান প্রলয় । মানুষ দিশেহারা।
  সরকার,ধনী উচ্চ মধ্যবিত্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে,নিরন্নের মুখে গ্রাস তুলে ধরেছে। কিন্তু আমাদের  দেশে এতো গরীব,যে যার যতটুকু সামর্থ্য ততটুকু নিয়ে এগিয়ে আসে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়,নানা চ্যারিটেবল গড়ে তাদের সাহায্য করে,মনে হয় বিবেকানন্দের আদর্শ আমরা ভুলি নি।

"জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন্ সেবিছে ঈশ্বর"।
মন্ত্র আমাদেরকে আজো উদ্বুদ্ধ করে।এই উক্তি তুলে কতিপয় ব্যক্তি কেরালায় সন্তানসম্ভবা হস্তিনী কে আনারসের ভেতরে বোম রেখে নির্মমভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন,আজ স্বামীজির ঐ উক্তির যথার্থতা আছে কি?

এপ্রসঙ্গে বলা যায় অত্যাচার ছিল না কবে,নারী ধর্ষণ, কন্যা শিশুকন্যার ভ্রূণহত্যা,অবৈধ সন্তান হত্যা, ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া,ভাসিয়ে দেওয়া পাপ নয়!

উল্টোদিকে অনাথ শিশুদের পালনের জন্য অনাথ আশ্রম, দুস্থদের সেবার ব্যবস্থা, দীন দুঃখীর সেবাও তো হয়। স্বামীজির বানী তুলে আজ অযৌক্তিক বলার  কোনো অর্থ হয় না।এর মাঝে কিছু লোভী অসৎ মানুষ গরীবের রক্ত চোষা হয়ে দেখা দেয়। রেশনের ভাতা রূপ জিনিস গুলো রাতারাতি পাচার করে। তখন মনে হয় এই কি স্বামীজির চোখে দেখা ভারতভূমি।

 পরিযায়ী শ্রমিকদের আগমণ কিন্তু বড় মর্মান্তিক, করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করছে,ফলে বাধ্য হয়ে ওদের চেকিং হচ্ছে,কেউ পায়ে হেঁটে আসতে গিয়ে ক্ষুধা তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছে,ভয়ে আতঙ্কে কেউ কাছে যেতে চায় না,এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।

তবু ডাক্তার নার্স শান্তি রক্ষক বাহিনী দিনরাত্রি সমানে কাজ করে চলেছে,এ সাধনা স্বামীজির কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণা।
চীনের অতর্কিত আক্রমণে ভারত সন্তান বাঙালি প্রাণ দিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার মন্ত্র স্বামীজির দেখানো পথ।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দকে বাঙালির একটু ক্ষুদ্র অংশ হলেও অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা,চেনে না,তারা এই মহাত্মা গণের সম্পর্কে কৎসিত মন্তব্য করে।
তবে সমগ্র বাঙালির প্রাণে আলো জ্বালে এই মনীষীগণ,হয়তো কিছুটা স্তিমিত, সেজন্য আমাদেরকে আরো বেশি সজাগ হতে হবে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন,"বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বানী ছুটেছে জগৎ ভয়"। আমরা বাঙালি সেকথা মনে প্রাণে গ্রহণ করে কর্ম করে যাবো,হারতে দেবো না তাঁকে,হারাতে দেবো না তাঁর মতাদর্শকে।

উমা দে 
























সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )

No comments:

Post a Comment