Saturday, 20 June 2020

ময়ূখ হালদার / রানাঘাট, নদিয়া


Bishop John J. Keane: In Defense Of Swami Vivekananda


ঠিক এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বিবেকানন্দের প্রভাব বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর জীবনে কতখানি- এই বিষয়ে লিখতে বসে প্রথমে নিজেকেই কাঠগড়ায় তুলতে হলো। সবার আগে যে প্রশ্নটা উঠে এল- একজন বাঙালি হিসেবে আমি নিজে কতটা প্রভাবিত স্বামীজির ভাবধারায়? ব্যক্তিগতভাবে আমি নিরীশ্বরবাদী। স্বামীজি বলেছেন- "নিজের উপর বিশ্বাস না এলে ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস আসে না।" তবে কি আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নই! অন্তত তাঁর বাণী মেনে নিলে অর্থটা সেটাই দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে আত্মবিশ্বাসী। কোনও কাজ শুরু করলে তার শেষ না দেখে থামি না। আমি উদ্যমী, লড়াকু- একথা অন্তর থেকে বিশ্বাস করি। তাহলে? অমি একদিকে যেমন নিজেকে ফেলতে পারি না অন্যদিকে তেমন ঈশ্বরের ঘোরতর বিরোধী- এ এক চরম দ্যোতনা! আমি বিশ্বাস করি সুপার পাওয়ার। আর সেটা সমস্ত জীবের মধ্যেই বিদ্যমান। এও তো প্রকারান্তরে স্বামীজির ভাবনার সাথেই সম্পৃক্ত। আর্থাৎ বৈসাদৃশ্য থাকলেও কোনও একটা বিন্দুতে এসে তাঁর দর্শনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে আমার ভাবনা। অথচ একথা আমার চেয়ে ভালো কে বলতে পারেন যে তাঁর ভাবসমুদ্রে কতটুকুই বা সাঁতার কেটেছি!

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার প্রবণতায়
আমরা বিচলিত। হতাশা আমাদের জীবনে স্লো পয়জনিংয়ের মতো জাঁকিয়ে বসেছে। অথচ স্বামীজি বলেছেন- "নিজেদের বিপদ থেকে টেনে তোলো। তোমার উদ্ধার-সাধন তোমাকেই করতে হবে। ভীত হয়ো না।বারবার বিফল হয়েছো বলে নিরাশ হয়ো না। কাল সীমাহীন, অগ্রসর হতে থাকো, বারবার তোমার শক্তি প্রকাশ করতে থাকো, আলোক আসবেই।" আমরা তাঁর দর্শনকে কতটুকু বুঝেছি? আদৌ তাঁর কথার মর্ম উদ্ধার করতে পেরেছি কি? প্রশ্ন করার সময় কিন্তু এসে গেছে!

আমাদের বুঝতে হবে জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে জমে থাকা কুয়াশাকে। স্বামীজির মতে- "জীবন ও মৃত্যু হচ্ছে একই টাকার এপিঠ-ওপিঠ। উভয়েই মায়া। এই অবস্থাটা পরিস্কার করে বোঝবার জো নেই। একসময়  বাঁচার চেষ্টা হচ্ছে আবার পরমুহূর্তেই বিনাশ বা মৃত্যুর চেষ্টা।

একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় বর্তমানে বাঙালির চৈতন্য লোপ পেয়েছে। ভালো আর মন্দ নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে আমোদ-প্রমোদের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে দিতে চাইছে জীবন। সততা, পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, একাগ্রতা, দৃঢ়তা- এই শব্দগুলো ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে জীবন থেকে। এক অত্যাধুনিক শর্ট-কাট রাস্তায় ছুটে চলেছে বোধহীন বাঙালি।

আমরা বিবেকানন্দের বাণী, তাঁর আত্মজীবনী কিম্বা তাঁর দর্শনের ওপর আধারিত বই সংগ্রহ করি, পড়ি(?) আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজিয়ে গুছিয়ে বুক শেল্ফে তুলে রাখি। আর্থাৎ আমরা স্বামীজিকে বাইরে থেকে গ্রহণ করছি বটে কিন্তু তাঁর দর্শন, মননকে আত্মস্থ করছি না। অথচ তাঁর মতো দার্শনিক সমগ্র ভারতে খুব কমই আছেন। দর্শন এক অদ্ভুত মায়াপথ। মানুষ হাঁটে সেই পথে কিন্তু তাকে দেখতে বা চিনতে পারে না। আবার অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে হঠাৎ উপলব্ধি করা যায়- এ পথের হদিশ তো অমুক মানুষটা দিয়ে গেছেন!

সময় এসেছে স্বামীজির আদর্শকে সামনে রেখে নিজের সাথে কথা বলার। আত্মজিজ্ঞাসার।
"ভয়ই মৃত্যু
 ভয়ই পাপ
 ভয়ই নরক
 ভয়ই অসাধুতা
 ভয়ই ভুল জীবন
এই বিশ্বের সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা এই ভয়ের অসৎ শক্তি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।"
"ভয়"- এই দূষিত শব্দটাকে জয় করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই। প্রথমত ভয়ের কারণগুলো শনাক্ত করতে হবে। তারপর তার অ্যান্টিডট নিজেদের ওপরেই প্রয়োগ করতে হবে। সে পথও বাতলে দিয়েছেন স্বামীজি-
"সেই বিষয়ই ত্যাগ করো যা তোমাকে শরীর, বুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে।"
পরিশেষে বলা যায়, একথা অনস্বীকার্য যে প্রতিটা বাঙালির ব্যক্তিজীবনের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক যেদিকেই দৃকপাত করি না কেন-ফল্গুধারার মতো বয়ে চলেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। দরকার শুধু আত্মসমীক্ষার।

ময়ূখ হালদার 




















সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )

সোহিনী শবনম / চুঁচুড়া,হুগলি




৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে শিকাগো মহাসম্মেলনে স্বামীজির বক্তৃতা তথা সার্বজনীন বার্তা বর্তমান ভারতে যদি সকলের আদর্শের স্থান গ্ৰহণ করতে পারত এবং সকল মানুষ নির্দ্বিধায় খুশি মনে তা অনুসরণ করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সক্ষম হত তবে বোধহয় ২০২০ সালে মডার্ন যুগে ভারতের এমন দুর্দশা হত‌ না। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তথা তার অনুপ্রেরণা শুধু বই-এর পাতাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে (কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম)। শুধু বাঙালি কেন সমগ্ৰ বিশ্ব যদি স্বামীজির বাণী নিষ্ঠার সাথে পালন করত তবে কোনো কৃত্রিম, বাহ্যিক ভেদাভেদ মানুষে-মানুষে সম্পর্কে চির‌ ক্ষত সৃষ্টি করতে পারত না।

   সাধারণ মানুষের অগোচরেই তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে ভারতের কয়েকটি উচ্চ স্থানাধিকারী কর্তাগণ। সর্বোৎকৃষ্ট লিডার হিসেবে চিরসম্মানিত স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যখন বলেন—'চরিত্র গঠনের জন্য রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য অপেক্ষা উৎকৃষ্ট সাহিত্য আমি কল্পনা করিতে পারিনা',তখন আর কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। দেশের প্রধান চালিকাশক্তি যখন এই পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ, তখন ভারতের খুব পবিত্র শান্তিপূর্ণ দশা আশা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

    স্বামীজির কথায়—‘প্রকৃত ধার্মিক লোক সর্বত্রই উদার হয়ে থাকেন। তাঁর ভিতর যে প্রেম আছে, তাইতে তাঁকে বাধ্য হয়ে উদার হতে হয়। কেবল যাদের কাছে ধর্ম একটি ব্যবসা মাত্র তারাই ধর্মের ভিতর সংসারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা,বিবাদ ও স্বার্থপরতা এনে ব্যবসার খাতিরে ওরকম সংকীর্ণ ও অনিষ্টকারী হতে বাধ্য হয়।’বাস্তবিক উপরিউক্ত উদ্ধৃতিটির দ্বিতীয় অংশ আমাদের দেশে সম্পূর্ণ গতিতে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে চলেছে।

    ঠিক ভুল বিচার করার বয়স মানুষের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তৈরী হয়ে যায়। সেই সঠিক নির্বাচনের এক আদর্শ প্রতীক হলেন স্বামীজি। তাঁকে অনুসরণ করলে মানুষ স্বভাবতই মানুষ নামটির সঠিক ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারে। তাঁর বক্তব্যকে যদি বেদবাক্যর ন্যায় পালন করা যায় তবে, সত্যিই করুণা হয়।বক্তব্যটি খানিকটা এইরূপ—‘... কেউ যদি এরকম স্বপ্ন দেখেন যে, অন্যান্য ধর্ম লোপ পাবে আর তাঁর ধর্মই শুধু টিকে থাকবে, তবে তিনি বাস্তবিকই কৃপার পাত্র; তাঁর জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত।’

    ‘আমেরিকার বোন ও ভাইয়েরা’(সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা)—এই সম্বোধন সকলের পরিচিত। আমেরিকার স্থানে ভারত বসিয়ে যদি কেউ তাঁর বক্তৃতার উপস্থাপনা করেন তবে ধরে নেওয়াই যায়, তিনি বিবেকানন্দ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।তৎসত্ত্বেও কীভাবে কোনো ব্যক্তি নিজেকে কূপমন্ডূক করে সংকীর্ণ রাখতে পারেন অত্যন্ত ভাবনার বিষয়।

   স্বামীজির নিজস্ব অভিজ্ঞতা এই যে—‘আমাদের নিজেদের মাতৃভূমির‌ পক্ষে–হিন্দুধর্ম ও ইসলামধর্ম–এই দুই মহান মতের সমন্বয়–বৈদান্তিক মস্তিষ্ক এবং ইসলামীয় দেহ–একমাত্র আশা। আমি মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি–এই বিবাদ-বিশৃঙ্খলা দূর করে ভবিষ্যৎ পূর্ণাঙ্গ ভারত বৈদান্তিক মস্তিষ্ক ও ইসলামীয় দেহ নিয়ে মহামহিমায় অপরাজেয় শক্তিতে জেগে উঠছে।’সেখানে যদি সেই বিবাদকেই সমগ্ৰ কার্যের মূলকেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হয় তবে ভারতের দুর্দশা তো অনিবার্য।

   এসব সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষিত মানুষ যদি লালসা ত্যাগ করে সুস্থ মস্তিষ্কে আপন জ্ঞান অনুশীলন করেন এবং স্বামীজির সেই মাটিতে পোঁতা বীজের মতো মাটি,বাতাস,জল গ্ৰহণ করে নিজ বুদ্ধিকে বৃক্ষে পরিণত করতে পারেন,তবে ভারতের অবস্থা  মানসিকতার দিক থেকে কিছুটা উত্তরণ ঘটবে,এমন আশা করা যেতে পারে।যে মানুষ চিরকাল একটি সারমর্ম দিয়ে গেলেন–সমন্বয়, শান্তি,পরমতগ্ৰহিষ্ণুতা এবং বিশ্বজনীনতা,ভারতের এমন দশা দেখলে তিনি সত্যিই কষ্ট পেতেন।

    তাঁর সমস্ত বার্তা পালন‌ করে ভারতবাসী যদি নিজ দেশপ্রেমে দেশের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করেন তবে খুব শীঘ্রই সমস্ত বিভেদ সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে সকল পতাকায় একটি কথাই‌ লিখিত হবে—‘বিবাদ নয়,সহায়তা;বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্ৰহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।’


সোহিনী শবনম





















সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )

ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় (রবিকাশ্যপ) / রামগড়, নাকতলা


ক্কেবারে আনকোরা দৃষ্টিতে এক ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল মনীষীর সম্পর্কে কিছু ছুঁয়ে যেতে সততই ভালো লাগে, আর ভালোলাগা তখনই ভালোবাসায় প্রকাশ পায়, অন্তত আমার, যখন তা আমার মতো সাধারণ ও আপামর বাঙালির জীবন ঘেঁষা হয়। এই লেখাটার বর্তমান সময়কাল এমন একটা হাহাকারের সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন মানসিক দৃঢ়তা ও নিজের উপর বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। গোটা বাংলার জীবনেই তো বাঙালির শ্বাস নেওয়া। এক অজানা ও উদ্ভট অণুজীবের ক্রমাগত সংক্রমণ বৃদ্ধি ও তাতে মৃত্যু, সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে লকডাউন, বেকারত্ব বৃদ্ধি, অর্থনীতির অধোগমন…সর্বদাই শুধু বেঁচে থাকার লড়াই, মানুষকে যেন এক ভয়ংকর খাদের ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তার ওপর প্রকৃতির তান্ডব মরার উপর খাঁড়ার ঘা চালিয়ে জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ওদিকে সীমান্তে দুই প্রতিবেশীর অন্যায় আগ্রাসন ও তার বিরুদ্ধে দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার লড়াইতে বঙ্গমাতার বীর সন্তানদের শহীদ হওয়ার ঘটনায় বাঙালির জীবনে শুরু হয়েছে এক তীব্র আলোড়ন।

এই আলোড়নের পিছনে স্বাভাবিক ভাবেই দেশের জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের ঘটনা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অন্যায় আগ্রাসনই একমাত্র কারণ। বহুবছর পিছিয়ে গিয়ে আঠারোশ ছিয়ানব্বই সালের মাঝ ডিসেম্বরের একটা ঘটনাই দেখা যাক। স্বামীজী বহুদিন পরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসছেন। ঐ সময়ে এক ইংরেজ ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, বিলাসে ভরপুর পশ্চিমের দুনিয়ায় অতদিন কাটিয়ে নিজের দেশে ফিরে কেমন লাগবে? তাতে স্বামীজী জানিয়েছিলেন যে, তিনি আগে শুধুই ভারতবর্ষকে ভালোবাসতেন, কিন্তু ততোদিনে ওনার কাছে দেশের প্রতিটা ধূলিকণা পবিত্র, দেশের বায়ু পবিত্র, নিজের ভারত এক পূণ্যভূমি, এক তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। এই মানুষটিই বাঙালির হৃদয়ের সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন অচিরেই, যা আজও সর্বতোভাবে চিরন্তন।

নিজের প্রায় পনেরো বছর বয়সে স্বয়ং নেতাজীর জীবনেও প্রবেশ করেছিলেন স্বামীজী, একথা নেতাজীই উল্লেখ করেছিলেন। স্বামীজীর লেখা পড়ে উজ্জীবিত হয়েছিলেন নেতাজী, যখন, তিনি তাঁর ছাত্রজীবন অতিবাহিত করছিলেন। এইভাবে দেশমায়ের পরাধীনতার অন্ধকার ঘোঁচাতে ঐ বাঙালির জীবনে স্বামীজীর প্রভাব সর্বজনবিদিত।

স্বামীজী দেশে ফেরার পরে আঠারোশ সাতানব্বই সালের ফেব্রুয়ারির আঠাশ তারিখে শোভাবাজার রাজবাড়ীতে তাঁকে নাগরিক অভিনন্দন জানানো হয়েছিল। পাশ্চাত্যে বিপুল কীর্তি স্থাপনের জন্য এই বাঙালিকে সেইসময় রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুর অভিনন্দন পত্র একটা রূপোর পাত্রে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে স্বামীজী যেন কলকাতার এক অতি সাধারণ ছেলে। সকলকে আহ্বান করেছিলেন জগতের আহ্বানে সাড়া দিতে। সেইদিনের বক্তব্যে দেশের যুবকদের উপর তিনি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন। অন্যদিকে সেইসময় যাদের জন্মই হয়নি, তারাও; অর্থাৎ আমার, আপনার মতো আপামর বাঙালি যেন আজও তাঁর সেই চিরশাশ্বত আহ্বান হৃদয়ের গভীরে শুনতে পাই।

যুবদের মধ্যে তিনি ব্রহ্ম শক্তির সঞ্চার দেখেছিলেন। তিনি ব্যক্ত করেছিলেন তাঁর হৃদয়ের কথা, যে, 'দরিদ্র, সর্বহারা, অসহায় মানুষদের মধ্যে থাকা ঈশ্বর যুব সমাজের সেবা আকাঙ্ক্ষা করেন।' তাঁর আহ্বান বাঙালির মনকে প্রভাবিত অবশ্যই করেছে। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের পরে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনের ছেলেরা ছুটে গেছে দুর্গত এলাকায় ত্রাণের সামগ্রী নিয়ে। হাতে হাত মিলিয়ে আজও তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে প্রত্যেকের ঘাড়ের কাছে অভিশপ্ত নিশ্বাস ফেলছে মারণ ভাইরাস।

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা, উক্তি, উদ্ধৃতি উল্লেখ করতেন বিভিন্ন সময়ে। বিশেষ করে শ্রীরামকৃষ্ণের কথা, "যতদিন বাঁচি, ততদিন শিখি।" সে প্রসঙ্গে নিজে বলতেন, 'যে সমাজের কিছু শিখবার নেই, তা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে।' আজকের পরিবর্তিত বঙ্গজীবনেও আমরা প্রতিনিয়ত শিখেই যাচ্ছি। 'মান ও হুঁশ' নিয়ে তৈরী মানুষের জীবন সংগ্রামে এক অদ্ভুত অধ্যায় আমাদের সামনে এসেছে। সেখানে হতাশা ও বিষাদের একফোঁটাও স্থান নেই। এই চ্যালেঞ্জিং অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজকের বাঙালি নিশ্চয়ই মনে করবে ও ইতিমধ্যে করছে সেই বিবেক বার্তা, "হে বীর সাহস অবলম্বন করো; সদর্পে বলো - আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই…ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ…"হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও; মা, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দূর করো, আমায় মানুষ করো।"

ভাস্কর চট্টোপাধ্যায় (রবিকাশ্যপ)
























সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )

উমা দে / পশ্চিম বর্ধমান




শুধু ভারতবর্ষে নয় সারা বিশ্বে স্বামী বিবেকানন্দ এক মহান ব্যক্তিত্ব,এক আদর্শ পুরুষ।সব দেশ একবাক্যে গ্রহণ করেছে সামগ্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য তার বহু গ্রন্থে লেখা মতামত। পরাধীন ভারতবর্ষের পরিকাঠামোয় তার বহু প্রচারিত মতাদর্শ গ্রহণ করেন বহু বড় বড় নেতৃবর্গ। রাজনৈতিক বিবেচনায় তার বক্তব্য,"সমগ্র মানবজাতি একত্রে সহাবস্থান চাই,যে ধর্ম নিরন্নকে এক টুকরো রুটি দিতে পারে না,সে ধর্মকে তিনি মানেন না। তিনি বঞ্চনাহীন নতুন স্বাধীন ভারত গঠনের কথা বলেন।"'স্বদেশ মন্ত্র' গ্রন্থ।

 তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মের মূল সূত্র এখানেই।
শিকাগো ধর্ম সভায় ভারতের ধর্মীয় মতবাদ, দর্শন, ভাবাদর্শে বিশ্ব বিস্মিত হয়ে তাঁকে আদর্শ রূপে গ্রহণ করে।

  আজ ও বাঙালি বিপন্ন নানাভাবে, বাঙালির একটা বৃহৎ অংশ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তৎপর।আজ‌ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মির্জাফরের অভাব নেই,আজ‌ও ধর্ম বিদ্বেষ মাথা চাড়া দেয় মাঝে মাঝে,যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির‌ আগুন।

তখন মনে হয় স্বামীজির এত ভালোবাসার ভারতাত্মা কি হারিয়ে গেল।
তবে সকলেই যে তাকে ভুলে গেছে তার কিন্তু নয়,আজো খণ্ডিত ভারতবর্ষের ভ্রাতৃশত্রু পাকিস্তানের সর্বক্ষণের আক্রমণ বীর সেনানী ঠেকায় রক্তের বিনিময়ে শহীদ হয়ে। প্রতিরক্ষা করতে এগোয়, যদিও স্বামীজি এরূপ স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেন নি। চেয়েছিলেন"একত্র সহাবস্থান'। কিন্তু প্রেরণা তিনি।
বিশেষ করে করোনা ভাইরাস, বিগত চার মাস ধরে জীবন যাত্রাকে করেছে ব্যাহত,লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি,সরকারী চাকুরীজীবী তবু অন্ন সংস্থান করে। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো দু মুঠো অন্নের জন্য অন্ধকার দেখে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে আমফান প্রলয় । মানুষ দিশেহারা।
  সরকার,ধনী উচ্চ মধ্যবিত্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে,নিরন্নের মুখে গ্রাস তুলে ধরেছে। কিন্তু আমাদের  দেশে এতো গরীব,যে যার যতটুকু সামর্থ্য ততটুকু নিয়ে এগিয়ে আসে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়,নানা চ্যারিটেবল গড়ে তাদের সাহায্য করে,মনে হয় বিবেকানন্দের আদর্শ আমরা ভুলি নি।

"জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন্ সেবিছে ঈশ্বর"।
মন্ত্র আমাদেরকে আজো উদ্বুদ্ধ করে।এই উক্তি তুলে কতিপয় ব্যক্তি কেরালায় সন্তানসম্ভবা হস্তিনী কে আনারসের ভেতরে বোম রেখে নির্মমভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন,আজ স্বামীজির ঐ উক্তির যথার্থতা আছে কি?

এপ্রসঙ্গে বলা যায় অত্যাচার ছিল না কবে,নারী ধর্ষণ, কন্যা শিশুকন্যার ভ্রূণহত্যা,অবৈধ সন্তান হত্যা, ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া,ভাসিয়ে দেওয়া পাপ নয়!

উল্টোদিকে অনাথ শিশুদের পালনের জন্য অনাথ আশ্রম, দুস্থদের সেবার ব্যবস্থা, দীন দুঃখীর সেবাও তো হয়। স্বামীজির বানী তুলে আজ অযৌক্তিক বলার  কোনো অর্থ হয় না।এর মাঝে কিছু লোভী অসৎ মানুষ গরীবের রক্ত চোষা হয়ে দেখা দেয়। রেশনের ভাতা রূপ জিনিস গুলো রাতারাতি পাচার করে। তখন মনে হয় এই কি স্বামীজির চোখে দেখা ভারতভূমি।

 পরিযায়ী শ্রমিকদের আগমণ কিন্তু বড় মর্মান্তিক, করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করছে,ফলে বাধ্য হয়ে ওদের চেকিং হচ্ছে,কেউ পায়ে হেঁটে আসতে গিয়ে ক্ষুধা তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছে,ভয়ে আতঙ্কে কেউ কাছে যেতে চায় না,এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।

তবু ডাক্তার নার্স শান্তি রক্ষক বাহিনী দিনরাত্রি সমানে কাজ করে চলেছে,এ সাধনা স্বামীজির কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণা।
চীনের অতর্কিত আক্রমণে ভারত সন্তান বাঙালি প্রাণ দিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার মন্ত্র স্বামীজির দেখানো পথ।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দকে বাঙালির একটু ক্ষুদ্র অংশ হলেও অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা,চেনে না,তারা এই মহাত্মা গণের সম্পর্কে কৎসিত মন্তব্য করে।
তবে সমগ্র বাঙালির প্রাণে আলো জ্বালে এই মনীষীগণ,হয়তো কিছুটা স্তিমিত, সেজন্য আমাদেরকে আরো বেশি সজাগ হতে হবে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন,"বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বানী ছুটেছে জগৎ ভয়"। আমরা বাঙালি সেকথা মনে প্রাণে গ্রহণ করে কর্ম করে যাবো,হারতে দেবো না তাঁকে,হারাতে দেবো না তাঁর মতাদর্শকে।

উমা দে 
























সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )

Sunday, 14 June 2020

বিষয় - বাঙালির জীবনে বিবেকানন্দের প্রভাব



স্বামীজি 

বি
বেকানন্দ নিয়ে বাঙালি তথা সমগ্র পৃথিবীতে আলোচনার শেষ নেই। তাঁর লিখে যাওয়া ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য যথেষ্ট প্রশংসার অধিকারী। সর্বোপরি , স্বামীজির জীবনযাত্রা এবং সন্ন্যাস জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আজও মানুষকে উজ্জীবিত করে। তাঁর উল্লেখিত নীতি এবং জীবনকে চেনার অভিন্ন অনাদায়ী চিন্তনশীলতা নিয়ে সুদূর আমেরিকায় আজও আলোচনা হয়।


কিন্ত আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বাঙালির জীবনে স্বামীজির প্রভাব ঠিক কতখানি। স্বামীজি কি সত্যিই বাঙালি সমাজকে আজও প্রভাবিত করেন! আর যদি করেই থাকেন তাহলে তাঁর বহিঃপ্রকাশ হয় কিভাবে ! 

এই নিয়েই আমাদের এই সপ্তাহের প্রতিবেদন।
বিষয় - বাঙালির জীবনে বিবেকানন্দের প্রভাব

তাই আসছে শুক্রবার অর্থাৎ ১৯শে জুন'এর মধ্যে আপনার প্রতিবেদন পাঠান 8017220631 এই নম্বরে whatsapp করে । লেখা অবশ্যই ৩০০ শব্দের বেশি রাখার আবেদন রাখলাম।
আমরা অপেক্ষায় থাকবো ।


সাহিত্যের সন্ধানে'র সাপ্তাহিক ব্লগ প্রতিবেদন
কৌশিক দে (সম্পাদক )
অমৃতা রায় চৌধুরী, সম্রাট দে , অসীম দাস ( সহ সম্পাদক মন্ডলী )